কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের ওপর হামলার ঘটনায় তার অনুসারীদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সমগ্র কোম্পানীগঞ্জে।

আতঙ্কে উপজেলার প্রধান প্রধান বাজার গুলোর দোকানপাট বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। পুরো দিনে সাধারণ মানুষ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাজার মুখী হয়নি।

বাদল বাংলাদেশ আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার ওপর হামলার ঘটনার ৩ঘন্টা পর ফেইসবুক লাইভে এসে সেতুমন্ত্রীর ভাগনে ও উপজেলা আ’লীগের মুখপাত্র মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু শনিবার দুপুর ১২টা থেকে আগামী ৪৮ ঘন্টা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একই সাথে উপজেলা আ.লীগের নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভসহ আন্দোলন চালানোর আহ্বান করেন। মঞ্জুর ফেইসবুক লাইভের ঘোষণার পর পরই আ.লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা উপজেলার পেশকারহাট, বাংলাবাজার, বামনী বাজার, চৌধুরীহাট বাজার, চরহাজারী ইউনিয়নের শান্তির হাট টু বসুরহাট সড়ক, চাপরাশিরহাট বাজার, চরএলাহী বাজার, বসুরহাট পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ড, টেকের বাজার, পেশকারহাট রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ করে। এতে তারা কাদের মির্জার গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।

অন্যদিকে, দুপুর পৌনে ১টার দিকে বাদলের ওপর হামলার খবরে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজারের বসুরহাট টু পেশকারহাট রাস্তার মাথার প্রধান সড়ক অবরোধ করে বাদলের অনুসারীরা। এ সময় পুলিশ এসে তাদেরকে বাঁধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপর। তারপর পুলিশ আ’লীগ নেতা সবুজকে বেধড়ক মারধর করলে তার অনুসারীরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। এতে আ’লীগ নেতা সবুজ, তার ছেলে ও এক ভাগিনসহ সহ চার জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধরা হলো, চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৪নম্বর ওয়ার্ডের হিয়াল্লাগো বাড়ির বাসিন্দা আ’লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজ (৫৫), তার ছেলে চয়ন (২০), ও তার ভাগিনা আরিয়ান (২৩), চরকাঁকড়া ইউনিয়নের রুপনগর গ্রামের বাসিন্দা হৃদয় (২৮) ।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, রাস্তায় পুলিশের ওপর আক্রমণ করলে পুলিশ পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। তবে এ ঘটনায় কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি জানান, তিনি গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনেছেন। তবে কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে এ বিষয়ে তিনি এখনো সু-নির্দিষ্ট ভাবে জানেনা। ওসি সাইফুদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে তিনি হাসপাতালে খোঁজ খবর নিয়ে পরে বিস্তারিত জানাবেন। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো.আলমগীর হোসেন বলেন, কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে তা স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি। তবে তারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল। পুলিশ সরাতে গেলে তারা পুলিশের গাড়ি ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাদেরকে শর্ট গানের ২০-২২ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ইটপাটকেলের আঘাতে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, শনিবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আ’লীগ নেতা আলালসহ ঢাকার উদ্দেশ্যে বসুরহাট হয়ে রহনা করে। যাত্রা পথে বসুরহাট বাজারের প্রেসক্লাব কোম্পানীগঞ্জের একটু সামনে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে কাদের মির্জা তার ৪০-৫০জন অনুসারী নিয়ে বাজার পরিদর্শন করে আসার পথে বাদলের গাড়ির মুখোমুখি হয়। এ সময় কাদের মির্জার নেতৃত্বে তার অনুসারী কেচ্ছা রাসেল,ডাকাত মাসুদ,খান,শিহাব,সজল,আরিফ,ওয়াসিমসহ ৪০-৫০জন অনুসারী মিজানুর রহমান বাদলের গাড়ির গতি রোধ করে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। উপজেলা আ’লীগের মুখপাত্র মঞ্জু অভিযোগ করেন,হামলাকারীরা প্রথমে তার গাড়ির পিছনে গুলি করে। এক পর্যায়ে গাড়ির গতি রোধ করে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে তার হাত-মাথা পাটিয়ে দেয়,পা ও বুকের হাড় ভেঙ্গে দেয় এবং কানে গুরুত্বর জখম করে। এ বিষয়ে জানতে কাদের মির্জার ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।