নোয়াখালীর বার্তা ডটকমঃ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১৪) একাধিকবার ধর্ষণ, পুনঃরায় ধর্ষণের চেষ্টা, ঘটনা ধামাচাপা ও তার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীটির মা রবিবার রাতে সোনাইমুড়ী থানায় অভিযোগ দিলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে তা শালিস বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করার জন্য কালক্ষেপণ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা তার জানা নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নের বাসিন্দা বর্তমানে সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়ার ভাড়াটিয়া ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন একই এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের বখাটে ছেলে শহিদ (২৩)। মেয়েটিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে শহিদ। ঈদের পরদিন রবিবার রাত ৮টার দিকে পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে যাওয়ার সময় শহিদ ফুসলিয়ে ওই ছাত্রীকে বাড়ির পেছনের একটি কলাবাগানে নিয়ে যায়। বাগানে নিয়ে শহিদ তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। মেয়েটি তাতে বাধা দিলেও শহিদ মেয়েটির পরনের কাপড় খুলে ফেলে। ধস্তাধস্তির শব্দ পেয়ে স্থানীয় লোকজন তাদের দুজনকে আটক করে এবং পরে ছেড়ে দেয়।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকালে আবু তাহের কমান্ডার তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ধর্ষক, তার অভিভাবক ও ছাত্রীটির পরিবার নিয়ে শালিস বৈঠকে বসেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে শহিদ ইতপূর্বে তাকে আরও দুইবার ধর্ষণ করেছে বলে শালিস বৈঠকে জানায় ছাত্রীটি। রবিবার রাতে তার সঙ্গে কথা আছে বলে ওই কলাবাগানে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় শহিদ। এ সময় তার জামা কাপড় টেনে হিঁছড়ে খুলে ফেলে। শহিদ সভায় উপস্থিত লোকজনের সামনে মেয়েটিকে চেনেনা ও তার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করার সঙ্গে সঙ্গে সাজানো শালিস বৈঠক শেষ করেন আবু তাহের কমান্ডার। তারপর থেকে পলাতক শহিদ।

কান্নাজড়িত কন্ঠে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মা বলেন, আমার মেয়ের ইজ্জতও গেলো এখন আমাদের বাসা ও এলাকা ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিচ্ছে। আমি গরিব বলে কি বিচার পাবো না? টাকার কাছে কি ন্যায় বিচার জিম্মি? টাকার অভাবে তিনি মেয়ের মেডিকেল পরীক্ষা করাতে পারছেন না। বর্তমানে তিনি দুই মেয়ে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান।

আবু তাহের কমান্ডার শালিস বৈঠক করার কথা স্বীকার করে বলেন, মেয়েটির মা ও তার লোকজন ধর্ষণের ঘটনার কোন স্বাক্ষী প্রমাণ দিতে পারেনি। তাই মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে সার্টিফিকেট আনার পরামর্শ দিয়েছি।

সোনাইমুড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমির হামজা বলেন, রবিবার রাতে তিনি অভিযোগের তদন্তভার পেয়ে ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে শালিস বৈঠকে বসার জন্য বাদী তার কাছ থেকে দুই দিনের সময় চেয়েছেন।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা সোনাইমুড়ীতে ঘটেনি এবং এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। ঘটনার বিষয়ে জানতে রবিবার রাত ১১টা ৪০মিনিটের সময় জানতে চাইলেও ওসি এ ধরনের কোন ঘটনা জানেন না বলেও এ প্রতিবেদককে জানান।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ধর্ষন বা শ্লীলতাহানির ঘটনা কোনো অবস্থাতেই শালিসযোগ্য নয়। এ ঘটনায় যারা শালিস করেছে তারাও অপরাধী। এ বিষয়ে ছাত্রীটির মায়ের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ঘটনার মূল হোতাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।