নোয়াখালীর বার্তা ডটকমঃ নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া সাব পোস্ট অফিসের রেমিটেন্স প্রেরণে অনিয়ম ও সঞ্চয়পত্রের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পোস্ট মাস্টার নুর করিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে জেলা সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশন। নোয়াখালী ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মনিরুজ্জামান ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমদ জানান, এলাকাবাসী ও কয়েকজন গ্রাহক গোপনে অভিযোগ করলে জাতীয় সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হলে তদন্ত শুরু হয়। রামগঞ্জ-লক্ষ্মীপুরের উপবিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল নোয়াখালী বিভাগকে জানায়, প্রবাসী রেহানা বেগম, মারজাহান আক্তার, নয়ন আক্তার, আবুল কালাম, শ্রী যুতিষ চন্দ্র সেন, শারমিন আক্তার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদি হিসাব খোলার টাকা, সাধারণ হিসাব খোলার টাকা বেআইনিভাবে সাদা কাগজে স্লিপের মাধ্যমে গ্রহণ করে সরকারি তহবিলে জমা না দিয়ে এসপিএস, নুর করিম জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। পোস্ট মাস্টার নুর করিম আমানতকারীর পাশ বইতে জমা নিয়ে সরকারি খাতায় না দেখিয়ে নিজেই তা আত্মসাৎ করেন। বিগত ১৮ বছর থেকে খিলপাড়া সাব পোস্ট অফিসে থাকা পোস্ট মাস্টার নুর করিম বিভিন্ন সময় গ্রাহকের মেয়াদি ও সাধারণ হিসাবসমূহে জমা রাখা টাকা গ্রাহক বইতে এন্ট্রি করলেও সরকারি হিসেবে এন্ট্রি না করে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে ডাক বিভাগ প্রাথমিক তদন্ত করে বিশাল অঙ্কের টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়ার পর পোস্ট মাস্টারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্বীকার করে এবং দুই দফায় পোস্ট অফিস কোড নং ৮১১৩১০৯ (অশ্রেণি খাতে) ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। এ জমা দেয়ায় তার আত্মসাৎ দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ডাক বিভাগ চট্টগ্রাম সার্কেলের প্রধান আনন্দ মোহন দত্তকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি ও নোয়াখালীর ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলকে সভাপতি করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট অন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল জানান, এখনও তদন্ত চলছে তাই মোট কত টাকা আত্মসাৎ করেছে তা বলা না গেলেও ১০ কোটি টাকার বেশিও হতে পারে। এদিকে ইতিমধ্যে দুদক তদন্ত ভার গ্রহণ করে। পোস্ট মাস্টার নুর করিমকে তাদের হেফাজতে নিয়ে ৯ই জুলাই মঙ্গলবার নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৬নং আমলি আদালতের বিচারক মো. সাইদান নাহিদের আদালত থেকে ৩ দিনের রিমান্ডে আনেন। রিমান্ডে আনার প্রথম দিনেই গ্রেপ্তারকৃত পোস্ট মাস্টার নুর করিম মুখ খুলতে শুরু করেছেন। সে তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক সুবেল আহমদকে জানান, সে ৪ কোটি টাকার উপর আত্মসাৎ করেছে বলে তার মনে পড়ছে। এ টাকার মধ্যে তার আত্মীয় সেলিনা আক্তারের নামে ১ কোটি টাকা দিয়ে ৮ শতাংশ জমিন, খালাতো বোন সাহিদা আক্তারের নামে খিলপাড়ায় ২৪ লাখ টাকার জমিন, প্রতিবেশী ভাগ্নের নামে ১০ লাখ টাকার জমিন এবং ৬০ লাখ টাকা খরচ করে বড় ছেলেকে আমেরিকায় পাঠান এবং মো. শাজাহানের সঙ্গে ২৫ লাখ টাকার জমিনের বায়না করেছে। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাবাদ অব্যাহত রয়েছে। দুদকের এডি মানবজমিনকে বলেন, অভিযুক্তের জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদেরও আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এলাকাবাসী জানায়, এত বিশাল জালিয়াতি পোস্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে এই অপকর্মগুলো বীরদর্পে চালিয়ে আসছেন এই পোস্ট মাস্টার। এতে আমানতকারীরা আমানত ফিরিয়ে নেয়ার জন্য দুদক অফিসে ধরনা দিচ্ছে।