নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্ট ইনিংস ও ১৮৪ রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ করেছে সাকিব আল হাসানের দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫০৮

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ৩৬.৪ ওভারে ১১১ (ব্রাফেট ০, পাওয়েল ৪, হোপ ১০, অ্যামব্রিস ৭, চেজ ০, হেটমায়ার ৩৯, ডোরিচ ৩৭, বিশু ১, রোচ ১, ওয়ারিক্যান ৫*, লুইস ০; মিরাজ ৭/৫৮, সাকিব ৩/২৭)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (ফলোঅন) ৫৯.২ ওভারে ২১৩ (ব্রাফেট ১, পাওয়েল ৬, হোপ ২৫, অ্যামব্রিস ৪, চেজ ৩, হেটমায়ার ৯৩, ডোরিচ ৩, বিশু ১২, রোচ ৩৭ ,ওয়ারিকিয়ান ০, লুইস ২০* ; মিরাজ ৫/৫৯, তাইজুল ২/৪০, সাকিব ২/৬৫ নাঈম ১/৩৪)।

ফলাফল:
বাংলাদেশ এক ইনিংস ও ১৮৪ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ ।

সিরিজ সেরা: সাকিব আল হাসান।

কেমার রোচকে এলবিডব্লিউ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসের ইতি টেনেছেন তাইজুল ইসলাম। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি ব্যাটসম্যানের। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২১৩ রানে অলআউট হয়েছে সফরকারীরা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট বাংলাদেশ তিন দিনেই জিতেছে ইনিংস ও ১৮৪ রানে। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টও তিন দিনে জিতেছিল বাংলাদেশ।

ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ম্যাচে তার ১১৭ রানে ১২ উইকেট বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিংও। মিরাজ ছাড়িয়ে গেছেন নিজেকেই। ২০১৬ সালে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৯ রানে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার।

আগের ওভারে ফিরিয়েছিলেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা শিমরন হেটমায়ারকে। নিজের পরের ওভারে এসে জোমেল ওয়ারিক্যানকেও ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারকে ফিরতি ক্যাচ দেন ওয়ারিক্যান। দ্বিতীয় ইনিংসে এটি মিরাজের পঞ্চম উইকেট, আর ম্যাচে দ্বাদশ।

তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ১৭১ রান। উইকেটে কেমার রোচের সঙ্গী শেরমন লুইস। ইনিংস ব্যবধানে জয় থেকে আর মাত্র ১ উইকেট দূরে বাংলাদেশ।

মেহেদী হাসান মিরাজের আগের বলেই লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন শিমরন হেটমায়ার। পরের বলেই তাকে আউট করে প্রতিশোধ নিয়েছেন মিরাজ। অফ স্পিনারকে আবার উড়াতে গিয়ে লং অফে মোহাম্মদ মিথুনের হাতে ধরা পড়েন হেটমায়ার। সিরিজে চার ইনিংসে চারবারই হেটমায়ারকে আউট করলেন মিরাজ।

৯২ বলে ৯ ছক্কা ও এক চারে শেষ হয়ে হেটমায়ারের ৯৩ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। তার বিদায়ের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ১৬৬ রান। উইকেটে কেমার রোচের সঙ্গী জোমেল ওয়ারিক্যান। ইনিংস ব্যবধানে জয় থেকে আর ২ উইকেট দূরে বাংলাদেশ।

অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের লেংথ বল কাট করতে চেয়েছিলেন দেবেন্দ্র বিশু। এজ হয়ে ক্যাচ যায় প্রথম স্লিপে। আরেকটি দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় ইনিংসে এটি মিরাজের তৃতীয় উইকেট, ম্যাচে দশম।

টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ম্যাচে ১০ উইকেট পেলেন মিরাজ। ২০১৬ সালে ঢাকায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৯ রানে নিয়েছিলেন ১২ উইকেট।

বিশুর বিদায়ের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ১৪৩ রান। উইকেটে শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গী কেমার রোচ।

শেন ডোরিচকে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট পেয়েছেন নাঈম হাসান। অফ স্পিনারকে ডিফেন্ড করতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। এজ হয়ে ক্যাচ যায় প্রথম স্লিপে। দারুণ ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।

১৮ বলে ৩ রান করে ফেরেন ডোরিচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ৯৬ রান। উইকেটে শিমরমন হেটমায়ারের সঙ্গী দেবেন্দ্র বিশু।

৫৬ রানের জুটি গড়ে শিমরন হেটমায়ার ও শাই হোপ প্রতিরোধ গড়েছিলেন। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির পরপরই এ জুটি ভাঙেন মিরাজ। ডানহাতি স্পিনারের শর্ট বল মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে সাকিবের হাতে ক্যাচ দেন ২৫ রান করা হোপ। জয়ের থেকে বাংলাদেশ মাত্র ৫ উইকেট দূরে।

তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটা স্বপ্নের মতো কেটেছে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ইনিংস মিলিয়ে এই সেশনে ৮২ রানে ৯ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার সকালে বাংলাদেশের ৫০৮ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে যায় মাত্র ১১১ রানেই। ফলোঅনে পড়েও বাংলাদেশের স্পিনে ধুঁকছে সফরকারীরা।

লাঞ্চ বিরতির সময় দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ৪৬ রান। শাই হোপ ১৮ ও শিমরন হেটমায়ার ১৩ রানে অপরাজিত আছেন। ইনিংস হার এড়াতে এখনো প্রয়োজন ৩৫১ রান। ২-০ তে সিরিজ জিততে বাংলাদেশের চাই আর ৬ উইকেট।

আগের ওভারে নিয়েছিলেন সুনীল অ্যামব্রিসের উইকেট। নিজের পরের ওভারে এসে রোস্টন চেজকেও ফেরালেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে মুমিনুল হকের দারুণ এক নিচু ক্যাচে ফেরেন চেজ (৩)। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৯ রান। উইকেটে শাই হোপের সঙ্গী শিমরন হেটমায়ার।

প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১০ উইকেটই ভাগ করে নিয়েছিলেন মিরাজ ও সাকিব। তাইজুল ইসলাম বোলিংই পেয়েছিলেন মাত্র এক ওভার। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবার আক্রমণে এসে দ্বিতীয় বলেই উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারের নিচু হওয়া বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন সুনীল অ্যামব্রিস। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। তখন ২৩ রানে ৩ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শাই হোপের সঙ্গী রোস্টন চেজ।

প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন কাইরন পাওয়েলের উইকেট। অফ স্পিনারের বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে স্টাম্পড হয়ে ফিরেছেন পাওয়েল (৬)। তখন ১৪ রানেই ২ উইকেট নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের। উইকেটে শাই হোপের সঙ্গী সুনীল অ্যামব্রিস।

প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রথম ওভারে উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। মিল আছে আরো, আগেরবার উইকেট পেয়েছিলেন ওভারের শেষ বলে। এবারই তাই। আগেরবার ব্যাটসম্যান ছিলেন ক্রেইগ ব্রাফেট। এবারও তিনিই। আগেরবার ব্রাফেট হয়েছিলেন বোল্ড, এবারই একই ধরনের আউট। ২ রানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ হারিয়েছে প্রথম উইকেট।

নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম প্রতিপক্ষকে ফলোঅন করাল বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫০৮ রানের জবাবে ১১১ রানেই অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩৯৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করছে সফরকারীরা।

শেরমন লুইসকে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন লুইস। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৫০৮ রানের জবাবে ১১১ রানেই গুটিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে এটাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এ বছরের জুলাইয়ে কিংসটনে ১২৯ রান ছিল তাদের আগের সর্বনিম্ন স্কোর।

তৃতীয় দিনে এক ঘণ্টাও টেকেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ৫১ মিনিট। আগের দিনের ৫ উইকেটে ৭৫ রানের সঙ্গে এদিন আর ৩৬ রান যোগ করতেই শেষ ৫ উইকেট হারিয়েছে তারা।

আগের দিন ৩ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এদিন উইকেট নিয়েছেন আরো ৪টি। ৫৮ রানে ৭ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ২৭ রানে বাকি ৩ উইকেট নিয়েছেন সাকিব।

নিজের টানা তিন ওভারে তিন উইকেট নেওয়ার পর এক ওভার বিরতি দিয়ে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে আঘাত হেনেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার অফ স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন শেন ডোরিচ। ইনিংসে এটি মিরাজের সপ্তম উইকেট।

টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনিংসে সাত উইকেট পেলেন মিরাজ। এনামুল হক জুনিয়র, সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের পর বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে ইনিংসে সাত বা এর বেশি উইকেট পেলেন তিনি।

২০০৫ সালে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এনামুল ৯৫ রানে ৭টি, ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব ৩৬ রানে নিয়েছিলেন ৭টি উইকেট। আর ২০১৪ সালে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাইজুলের ৩৯ রানে ৮ উইকেট বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিং।

নিজের টানা তৃতীয় ওভারে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার তার শিকার কেমার রোচ। অফ স্পিনারকে উড়াতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ইনিংসে এটি মিরাজের ষষ্ঠ উইকেট।

রোচ ১ রান করে ফেরার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৮ উইকেটে ৯২ রান। উইকেটে শেন ডোরিচের সঙ্গী জোমেল ওয়ারিক্যান।

আগের ওভারেই ফিরিয়েছিলেন শিমরন হেটমায়ারকে। নিজের পরের ওভারে এসে দেবেন্দ্র বিশুকেও ফেরালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারকে কাট করতে চেয়েছিলেন বিশু। সিলি পয়েন্টে দারুণ এক ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। ইনিংসে এটি মিরাজের পঞ্চম উইকেট।

বিশু ১ রান করে ফেরার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ৮৮ রান। শেন ডোরিচের সঙ্গী কেমার রোচ।

মেহেদী হাসান মিরাজের আগের বলে শিমরন হেটমায়ারের বিপক্ষে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ নেয়নি রিভিউও। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায়, বাংলাদেশ রিভিউ নিলে উইকেট পেতে পারত। তবে উইকেট পেতে এক মিনিটও অপেক্ষায় থাকতে হয়নি মিরাজকে। অফ স্পিনার নিজের পরের বলেই পেয়েছেন উইকেট। তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সেই হেটমায়ারই।

দিনের চতুর্থ ওভারে ৫৩ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন হেটমায়ার। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৬ উইকেটে ৮৬ রান। উইকেটে শেন ডোরিচের সঙ্গী দেবেন্দ্র বিশুর।

ব্যাট-বলের অসাধারণ পারফরম্যান্সে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা পুরোপুরি নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে ৫০৮ রানের পাহাড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিন বিষে নীল হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং। ২৯ রানেই ৫ উইকেট হারানোর পর ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় আছেন শিমরন হেটমায়ার ও শেন ডোরিচ।

তৃতীয় দিনের খেলা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৭৫ রান। হেটমায়ার ৩২ ও ডোরিচ ১৭ রান নিয়ে রোববার তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমেছেন। এখনো ৪৩৩ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায়।