বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম মালয়েশিয়া সিমুনিয়া ইমিগ্রেশন ক্যাম্প পরিদর্শণ করেছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০ টায় তিনি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশি বন্দিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন।
এ সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনার সঙ্গে হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর ও অতিরিক্ত সচিব মো: সায়েদুল ইসলাম, মিনিষ্টার পলিটিক্যাল মো: রইস হাসান সারোয়ার, শ্রম শাখার ২য় সচিব মো: ফরিদ আহমদ, সাংবাদিক আহমাদুল কবির এবং দূতাবাসের কল্যাণ সহকারি মো: মোকসেদ আহমদ সঙ্গে ছিলেন।
ক্যাম্প কমান্ডার পিপি আই হাজিজান বিন আব্দুল্লাহ এবং ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ কামাল বিন ওসমান হাইকমিশনারকে স্বাগত জানান এবং হাই কশিনারের সঙ্গে বন্দীদের নিয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় ক্যাম্পের অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময়কালে কমান্ডার পিপি আই হাজিজান বিন আব্দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশি বন্দিরা অত্যন্ত ভাল। অন্যান্য দেশের বন্দিরা বিভিন্ন অপরাধে জেল খাটছে। বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি বন্দিরা শুধু অবৈধ বসবাস করায় তারা গ্রেফতার হয়ে জেল খাটছে এটাই তাদের অপরাধ।
ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশের নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরত প্রেরণ এবং অহেতুক বাংলাদেশি কর্মীদের হয়রানি না করার আশ্বাস দেন কামান্ডার। এসময় হাই কমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম ক্যাম্পের প্রধানকে যাতে বাংলাদেশি বন্দিদের কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাকগার কথা বলেন। সেই সঙ্গে বন্দিদের দ্রুত দেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন ক্যাম্পের এ কর্মকর্তা।
হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশটির ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে মালয়েশিয়ান আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকা, পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া এবং সাগর বা স্থলপথে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করে বিচার ও জেল শেষে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য রাখা হয় দেশটির বিভিন্ন ক্যাম্পে।
এরপর হাইকমিশন থেকে অস্থায়ী ট্রাভেল পাশ ইস্যু করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে নিজেকে বিমান ভাড়া বহন করতে হয়। সিমুনিয়া ক্যাম্পে ২৯৬ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরতের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের জাতীয়তা নিরূপণ করে ট্রাভেল পাশ ইস্যু করা হচ্ছে বলে জানান কাউন্সিলার (শ্রম) মো: সায়েদুল ইসলাম।
২৯৬ জনের মধ্যে ৪ ডিসেম্বর ৪০ জন, ৬ ডিসেম্বর ১৮ জন ও ১৩ ডিসেম্বর ৩১ জন বন্দী দেশে ফেরত যাচ্ছে বলে জানালেন ক্যাম্পের সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, সাজার মেয়াদ শেষ হলেও দেশে ফেরত যেতে পারেনি অনেকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে যোগাযোগ করতে পারেনি এবং মালয়েশিয়ায় তাদের কেউ বিমান ভাড়া দেয়নি তাই দেশে যেতে পারেনি।
এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে কাউন্সিলর (শ্রম) মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, বন্দি শিবিরে যারা আটক রয়েছেন তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাদের কেউ নেই অথবা টিকিটের ব্যবস্থা হচ্ছে না তখন দূতাবাসের পাশাপাশি জনহিতৈশী কাজে নিয়োজিতদের সহযোগিতায় বিমান টিকিট দিয়ে তাদের দেশে পাঠানো হয়।
এছাড়া দূতাবাসের শ্রম শাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন বলে জানালেন শ্রম কাউন্সিলর। এক প্রশ্নের জবাবে শ্রম কাউন্সিলর বলেন, প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছে তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য বিভাগের প্রতিদিনের মেগা-থ্রি অভিযানে বাংলাদেশিসহ অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে দেশটি। আটককৃতদের সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাম্বু, পিকে নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রাজায়ায় রাখা হচ্ছে।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন