৪ উইকেটে ৪৬ রান নিয়ে লাঞ্চ থেকে ফিরে আসার পর সাই হোপ আর শিমরন হেটমায়ারের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৫৬ রানের জুটি। পুরো ঢাকা টেস্টে এটাই ছিল ক্যারিবীয়দের সেরা জুটি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর হেটমায়ার আর সাই হোপের এই জুটি যখন ভাঙা খুব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন ব্রেক থ্রুটা এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
ইনিংসের ২৮তম ওভারের চতুর্থ বলে মিরাজকে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ধরা পড়েন সাই হোপ। ক্যাচ ধরেন সাকিব আল হাসান। ৭৫ বলে ২৫ রান করে বিদায় নেন হোপ। ৫ম উইকেপ পড়ে ৮৫ রানে।
সাকিব মিরাজের উইকেট সাম্রাজ্যে আগেই ভাগ বসিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। এবার উইকেট নেয়ার তালিকায় নাম লেখালেন নাঈম হাসানও। ৩৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ৩ রান করে আউট হন শেন ডওরিচ। নাঈম হাসানের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
৯৬ রানে পড়লো ৬ষ্ঠ উইকেট। এ রিপোর্ট লেখার সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৩৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১০। ৬০ রান নিয়ে শিমরন হেটমায়ার এবং ২ রান নিয়ে ব্যাট করছেন দেবেন্দ্র বিশু। ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও ২৮৭ রান করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
প্রথমবারেরমত বাংলাদেশের সামনে কোনো টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের হাতছানি। প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানের বিশাল লিড নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলোঅন করিয়েছে বাংলাদেশ। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও তথৈবচ অবস্থা ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
প্রথম ইনিংসের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ইনিংসেও একের পর এক উইকেট হারিয়ে যাচ্ছে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দল। প্রথম সেশন শেষ হওয়ার আগে ২৯ রানে হারিয়েছে ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত সেই ৪ উইকেটে ৪৬ রান নিয়ে লাঞ্চে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৮ রান নিয়ে ব্যাট করছেন সাই হোপ এবং ১৩ রান নিয়ে রয়েছেন শিমরন হেটমায়ার। ইনিংস পরাজয় এড়াতে এখনও ৩৫১ রান করতে হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশ দলে কোনো পেসার নেই। চারজন স্পেশালিস্ট স্পিনার। চট্টগ্রাম টেস্টেও ছিলেন তারা চারজন। যদিও চট্টগ্রামে সাফল্য কম বেশি পেয়েছেন সবাই। কিন্তু ঢাকা টেস্টে সাকিব আর মিরাজ যেন কৃপণ হয়ে উঠেছিলেন। প্রথম ইনিংসে ক্যারিবীয়দের ১০ উইকেটের সবগুলোই ভাগ করে নিয়েছিলেন তারা দু’জন। মিরাজ ৭টি, সাকিব ৩টি।
বাকি দু’জন বোলিংই করার খুব একটা সুযোগ পাননি। নাঈম হাসান করেছেন মাত্র ৩ ওভার। তাইজুল ইসলাম করেছেন আরও কম, মাত্র ১ ওভার। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দিয়েও ১ ওভার বল করিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু উইকেট সবই গেলো মিরাজ-সাকিবের পকেটে।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ দলের এই দুই বোলার। শুরুতেই উইকেট নিয়ে নেন সাকিব। তার দেখাদেখি মিরাজও নিলেন ১টি। অর্থ্যাৎ ক্যারিবীয়দের প্রথম ১২ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছেন মিরাজ (৮টি) এবং সাকিব (৪টি)। অবশেষে এই দু’জনের সাম্রাজ্যে ভাগ বসালেন তাইজুল ইসলাম। ক্যারিবীয়দের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩য় উইকেটটি নেলন তাইজুল ইসলাম। ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি সুনিল আমব্রিসকে।
তাইজুলের ঘূর্ণি এরপরও অব্যাহত রয়েছে। তার ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে এবার ক্যাচ তুললেন রস্টোন চেজ। তাইজুলের বল ড্রাইভ করতে গিয়েই ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বসেন চেজ। এক্সট্রা কভারে ক্যাচ উঠে গেলে সেটা ধরেন মুমিনুল হক। ৩ রান করে ফিরলেন রস্টোন।
স্বাগতিক বাংলাদেশের করা ৫০৮ রানের বিশাল রানের নিচে চাপা পড়েই কি তবে পিলে চমকে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের! না হয়, মাত্র ১১১ রানেই অলআউট হয়ে যায় তারা! ৩৯৭ রানের বিশাল লিড। সঙ্গত কারণেই ফলো অন করানোটা বাংলাদেশের জন্য খুবই সহজ একটি কাজ। সেই কাজটিই করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দলকে ফলোঅনে ফেললো বাংলাদেশ।
ফলো অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারলো না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের শুরুতেই সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা। শুরুতেই হারিয়েছে উইকেট।
প্রথম ইনিংসের শুরুতেই, অর্থ্যাৎ প্রথম ওভারেই আউট হয়েছিলেন অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। এবারও একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি। এবারও প্রথম ওভারে আউট হলেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক। এবারও তিনি আউট হলেন সাকিব আল হাসানের বলে। দুই ইনিংসের শুরুতেই, অর্থ্যাৎ প্রথম ওভারেই সাকিবের হাতে উইকেট হারিয়ে ক্যারিবীয় ইনিংসের বিপর্যয়ের সূচনা করে দিয়েছেন তাদের অধিনায়কই।
ওভারের পঞ্চম বলে সাকিবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ১ রান করেই সাজঘরের পথে পা বাড়িয়েছেন ব্র্যাথওয়েট। সাকিবের দেখাদেখি মিরাজও মেতে ওঠেন উইকেট উৎসবে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে মিরাজ তুলে নেন কাইরন পাওয়েলের উইকেট। মিরাজের বলে সামনে এগিয়ে এসে খেলতে যান তিনি। কিন্তু বল মিস করেন। উইকেটের পেছনে তড়িৎ গতিতে বল ধরে বেলস ফেলে দেন মুশফিকুর রহীম।