নোয়াখালীর বার্তা ডটকমঃ শেরপুর থেকে নোয়াখালীর চাটখিলে ফেরত আসা তাবলিগ জামাতের ১৯ জন সদস্যকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের সবার।
বুধবার সকালে পাঁচগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে তাদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা সবাই চাটখিল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
তাবলিগ জামাতের আমীর মাহমুদুল হাছান দুলাল পাটোয়ারী জানান, গত ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার চাটখিল পৌরসভার দৌলতপুর, ভীমপুর ও পাঁচগাঁও ইউনিয়ন থেকে মোট ১৯ জন তাবলিগ জামাতের সদস্য তার নেতৃত্বে ৪০ দিনের জন্য শেরপুর জেলায় যান। শেরপুরের বিভিন্ন মসজিদে ৪০ দিনের চিল্লা শেষে ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি পিকআপভ্যান যোগে নোয়াখালীর চাটখিলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। বুধবার ভোরে তাদের পিকআপভ্যানটি চাটখিল-সোনাইমুড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী চাটখিল কাচারি বাজার পোলে পৌঁছলে পুলিশ তাদের গাড়ির গতিরোধ করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ওই স্থানে পুলিশ তাদের তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের সবাইকে চাটখিল পাঁচগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে ওই বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষে তাদের ঢুকিয়ে তালা ঝুলিয়ে চলে যান স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন। কিন্তু বিকাল তিনটা বাজলেও তাদের খাওয়ার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
পরে তাবলিগের সাথীরা চিৎকার করলে স্থানীয় এলাকাবাসী এগিয়ে এসে তাদের শুকনো খাবার ও পানি দিয়ে যান।
চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তামজীদ হোসেন বলেন, চেকপোস্ট থেকে চাটখিল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলামের সহযোগীতায় তাবলিগের সদস্যদের নমুনা পরীক্ষার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। পরে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ স্যারের নির্দেশে নমুনা সংগ্রহ করি।
চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, সকাল ৯টায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ ইনস্ট্রিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৮৫ বছরের এক ব্যক্তির কাশি ও শ্বাসকষ্ট আছে। এ সমস্যা তার আগ থেকে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পাঁচগাঁও ইউনিয়নের কাচারি বাজার চেকপোস্টে একটি ট্রাকের গতিরোধ করা হয়। পরে ট্রাকের মধ্যে থাকা ১৯ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে শেরপুর থেকে আসছেন বলে স্বীকার করলে তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়। তাদের সবাইকে নমুনা সংগ্রহের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা তাবলিগের সদস্যদের খাওয়ারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকজনের জন্য তাদের বাড়ি থেকে খাওয়ার নিয়ে আসা হয়। আর তাবলিগের ওই সদস্যদের সাথে রান্না করার সকল সামগ্রী রয়েছে। তাদের বাজারের দরকার হলে আমার সাথে যোগাযোগ করলে তারও ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।
চাটখিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. দিদারুল আলম জানান, শেরপুর থেকে ফেরত আসা ১৯ জন তাবলিগ জামাতের সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তারা সবাই চাটখিল পাঁচগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকার সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে তাদের খাওয়ার সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।