বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মনোনয়ন বাতিল একান্তই নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটি সরকারের এখতিয়ারের বাইরে।
তাই যদি না হতো তাহলে আমাদের সবচেয়ে বড় শরিক জাতীয় পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি কি বাদ পড়তেন?
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী আসন নোয়াখালী-৫ এ বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের হলফনামায় ত্রুটি থাকার পরও আমি একান্তভাবে চেয়েছি তিনি যেন নির্বাচনে অংশ নেন।
কাদের বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মওদুদ আহমদ সাহেব। খুব নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল মওদুদ আহমদ সাহেবের মনোনয়ন দাখিলে কিছু ‘ঘাপলা’ আছে। কিন্তু আমি চেয়েছি তিনি যেন নির্বাচন করেন। না হলে নির্বাচন তো জমবে না। ওখানে কার সঙ্গে ইলেকশন করব? আমার কিন্তু এই মানসিকতা কাজ করে।
উনার প্রার্থিতা যেন টিকে যায় আমি এটা চেয়েছি। ২০০৮ সালেও এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, আমি কোনো বাধা সৃষ্টি করব না, নিয়মকানুনের কোনো বিষয় নিয়ে আমি লড়তে যাব না। যে যেখানেই বাদ গেছেন সেখানে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের জন্যই বাদ গেছেন।
সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
১৩ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হাজী সেলিম তাহলে কীভাবে নির্বাচন করছেন- জানতে চাইলে কাদের বলেন, হাজী সেলিম ১৩ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে টিকে গেছেন। এখানে আওয়ামী লীগেরও সন্দেহ ছিল তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। তাই ওই আসনে দুজনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী আইনে তিনি টিকে গেছেন- এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে হয়েছে। দুই বছরের বেশি যারা কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
কাদের বলেন, আমাদেরও তো অনেকে বাদ পড়েছেন, আমাদের কি করার আছে? নির্বাচন কমিশন তার আইন মেনে কাজ করছে। নতুন করে তো কোনো আইন করা হয়নি। নির্বাচনী যে আইন সে আইন অনুযায়ী বাদ গেছেন, এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই।
দেশ, জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে কোনো আজুহাতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট যেন নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ায় সে আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওয়ান সাইডেড গেম হোক, ওয়ান সাইডেড ম্যাচ হোক, সেটা আমরা চাই না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা কোনোভাবেই একতরফা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনে লড়াই করতে চাই না। ডেমোক্রেসি হচ্ছে দুই চাকার বাইসাইকেল। এখানে কে অপজিশন হবে সেটা পিপলস ডিসাইড করবে।
আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দেব, এমন ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোষণ করেন না। আমি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে এবং দেশবাসীকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করতে চাই।
নিজের দায়িত্বশীল জায়গা থেকেই এমন বলছেন জানিয়ে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের রেস্পন্সেবল পোস্টে থেকে আমি একটা কথা বললাম, ২৩-২৪ দিন পরে সেটা থাকল না! সেটা তো হয় না, দেশবাসী এটা মনে রাখবে।
ফাঁকা বুলি-ফাঁকা প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না, যা সত্য তাই বলছি। আমরা চাই, সবাই নির্বাচনে লড়বে এবং নির্বাচনে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবে। ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যে হুমকি দেয়া হচ্ছে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সেখান থেকে তারা সরে আসবেন বলে প্রত্যাশা করি।
২০ দলীয় জোটের অভিযোগের প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, অলি আহমেদ সাহেবের সঙ্গে সম্ভবত গতকালই আমার মোবাইলে কথা হয়েছে। তিনি প্রশাসনিকভাবে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের ব্যাপারে কিছু কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছিলেন।
আমি তখনই তাকে বলেছি, দেখুন এখন তো পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারপরও বর্তমান সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে রুলিং পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে আমি চেষ্টা করব কোনোভাবেই যেন আপনার এলাকায় লেভেল প্লেইং ফিল্ড ক্ষুণ্ন না হয়। আমি এ ব্যাপারে কথা বলেছি। আমরা যেহেতু সরকারে আছি, নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে। আমি সেখানে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।