নোয়াখালীর বার্তা ডটকমঃ তাঁর কথা ও কর্মের মধ্যে ছিল মানুষের জন্য ভালোবাসা। মানবতাকে যিনি হাত ধরে চলেছেন, তিনি হলেন হাসান শরীফ।

সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন, লকডাউন শিথিল, লকডাউনের দ্বিতীয় ধাপ; তৃতীয় ধাপ নিয়ে ভাবছে, তখন এই হাসান শরীফ শুধু সেবা দিয়ে গেছেন। যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন, সেবা দিয়েছেন তাঁদের।

হাসান শরীফ কাজ করেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্যতম এলাকা ইতালির মিলানের পামাগোস্তা সান পাওলো হাসপাতালে। কাজ শুরু সেই ২০১১ সাল থেকে। জীবন ছিল রুটিন বাঁধা। সকালে ঘুম থেকে উঠে চিরচেনা শহরের রাস্তা দিয়ে কাজে আসা। আবার ডিউটি শেষ করে বাসায় ফেরার মাঝে দেশে পরিবারকে সময় দেওয়া। ছুটির দিনে একটু বেশি ঘুমানো। আর কখনো কখনো বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। এই জীবনের ছন্দে হঠাৎই পতন। কারণ করোনা ভাইরাস।

হাসপাতালের সাড়ে ৩ হাজার ডাক্তার, নার্স, রোগী ও কর্মচারী আছেন। খাবার তাঁদের রুমে পৌঁছে দেওয়া, খাবার শেষে নিয়ে আসা এবং ব্যবহারিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করার কাজ করে ১৬-১৭ জনের একটি গ্রুপ। হাসান শরীফ এই গ্রুপের প্রধান। এই গ্রুপে ৬ জন বাঙালিসহ ইতালিয়ান, পেরুভিয়ান, আফ্রিকান, ইজিপশিয়ান, মরোক্কিসহ অনেক দেশের নাগরিকেরা কাজ করেন।

হাসান শরীফের ভাষায়, সেদিন শনিবার ছিল (তারিখটা মনে করতে পারেননি)। হাসান যথারীতি খাবার পৌঁছে দিতে রোগীদের ওখানে যান। কিন্তু আগের পরিবেশের সঙ্গে মেলে না কিছুই। অল্প সময়ের ব্যবধানে পরিচিত সেই রুম আর রুমে থাকা মানুষগুলোর যেন আমূল পরিবর্তন। রোগীদের গ্লাসের মধ্যে রাখা হয়েছে। ডাক্তার ও নার্সদের চোখ–মুখ ঢাকা সাদা পোশাকে মোড়ানো পা থেকে মাথা পর্যন্ত। সেই মুহূর্তেই শোনেন, এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কাজ শেষে নিজের কাজের স্থানে এসে হাসান কারও সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেনি। যদি তাঁরা ভয় পেয়ে যান। আগামীকাল থেকে যদি তাঁরা না আসেন, তাহলে এতগুলো মানুষ কীভাবে খাবার পাবেন। ধীরে ধীরে যদিও সবাই জেনে যায় আবার অনেক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

অথচ হাসান শরীফ যুদ্ধ করে যান। কর্মী কমে যাওয়ায় তিনি আরেকটি পথ অবলম্বন করেন, যার ফলে কর্মীর সংকট নিরসন হয়। কিন্তু তিনি পালাতে পারেননি। চোখের সামনে দেখেছেন করোনা রোগীদের হাহাকার, এক লিফটেই করোনায় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে নেমেছেন। করোনা রোগীদের খাবারের ব্যবহারিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করেছেন নিজ হাতে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিবেদিতপ্রাণ ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে হাসি–গল্পে মশগুল থেকেছেন…।

দিন শেষে ঘরে এসে এবার চলত নিজের সঙ্গে হাসানের যুদ্ধ। আগামীকাল যেতে পারবেন কি আবার যুদ্ধে। এদিকে যখন দেশ থেকে পরিবারের ফোন আসত, শুরু হতো মিথ্যা মিথ্যা খেলা। পরিবারের সবাই জানতেন তাঁদের সবচেয়ে ছোট ছেলেটি ঘরে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাঁরা জানতেন না যে তাঁদের এই ছেলেটি মানবতা আর দেশপ্রেমকে ধারণ করে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা মৃত্যুর রাজপ্রাসাদকে জীবন দিতে যান।

কোনো এক উৎসবের দিন কাজের স্থানে। ছবি: সংগৃহীতসেই হাসপাতালে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও করোনায় চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। এর মধ্যে একজন মারাও যান। তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন প্রতিটি বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নিতে। রোগীদের খবরাখবর তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে পৌঁছে দিতে।

বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানার দেওটি ইউনিয়নের ঘাখেরখিল গ্রামের আবুল হোসেন আখোনজীর ছোট ছেলে হাসান শরীফ। ৩৫ বছরের হাসান ২০০৬ সালে এই স্বপ্নের দেশ ইতালিতে আসেন। প্রথমে ভিসেন্সা এবং পরে মিলানোতে। শোনা যায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

কোন বিশেষ কথা অথবা চাওয়া অথবা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেন কি না জানতে চাইলে বলেছেন, আপনারা যখন ঘরে ছিলেন আমি তখন এই রোগের ঘরে বাস করেছি। এই পরবাসের এই সময়ে দাঁড়িয়ে এটাই বুঝেছি যে মানুষের জন্য মানবতা ও ভালোবাসা কখনো স্থান, কাল বা পাত্রে ধারণ করে রাখা যায় না। আজ দেশের দিকে তাকালে দেখি করোনার কারণে মানবিকতা চলে গেছে। ইতালিয়ানদের দেখে এইটা বুঝেছি যে মানুষের জন্য মানবতা ও ভালোবাসাই বাঁচাতে পারে জীবন। অন্যকিছু দিয়ে না।

 তাঁর কথা ও কর্মের মধ্যে ছিল মানুষের জন্য ভালোবাসা। মানবতাকে যিনি হাত ধরে চলেছেন, তিনি হলেন হাসান শরীফ।

সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউন, লকডাউন শিথিল, লকডাউনের দ্বিতীয় ধাপ; তৃতীয় ধাপ নিয়ে ভাবছে, তখন এই হাসান শরীফ শুধু সেবা দিয়ে গেছেন। যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন, সেবা দিয়েছেন তাঁদের।

হাসান শরীফ কাজ করেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত অন্যতম এলাকা ইতালির মিলানের পামাগোস্তা সান পাওলো হাসপাতালে। কাজ শুরু সেই ২০১১ সাল থেকে। জীবন ছিল রুটিন বাঁধা। সকালে ঘুম থেকে উঠে চিরচেনা শহরের রাস্তা দিয়ে কাজে আসা। আবার ডিউটি শেষ করে বাসায় ফেরার মাঝে দেশে পরিবারকে সময় দেওয়া। ছুটির দিনে একটু বেশি ঘুমানো। আর কখনো কখনো বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া। এই জীবনের ছন্দে হঠাৎই পতন। কারণ করোনা ভাইরাস।

হাসপাতালের সাড়ে ৩ হাজার ডাক্তার, নার্স, রোগী ও কর্মচারী আছেন। খাবার তাঁদের রুমে পৌঁছে দেওয়া, খাবার শেষে নিয়ে আসা এবং ব্যবহারিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করার কাজ করে ১৬-১৭ জনের একটি গ্রুপ। হাসান শরীফ এই গ্রুপের প্রধান। এই গ্রুপে ৬ জন বাঙালিসহ ইতালিয়ান, পেরুভিয়ান, আফ্রিকান, ইজিপশিয়ান, মরোক্কিসহ অনেক দেশের নাগরিকেরা কাজ করেন।

হাসান শরীফের ভাষায়, সেদিন শনিবার ছিল (তারিখটা মনে করতে পারেননি)। হাসান যথারীতি খাবার পৌঁছে দিতে রোগীদের ওখানে যান। কিন্তু আগের পরিবেশের সঙ্গে মেলে না কিছুই। অল্প সময়ের ব্যবধানে পরিচিত সেই রুম আর রুমে থাকা মানুষগুলোর যেন আমূল পরিবর্তন। রোগীদের গ্লাসের মধ্যে রাখা হয়েছে। ডাক্তার ও নার্সদের চোখ–মুখ ঢাকা সাদা পোশাকে মোড়ানো পা থেকে মাথা পর্যন্ত। সেই মুহূর্তেই শোনেন, এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কাজ শেষে নিজের কাজের স্থানে এসে হাসান কারও সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কথা বলেনি। যদি তাঁরা ভয় পেয়ে যান। আগামীকাল থেকে যদি তাঁরা না আসেন, তাহলে এতগুলো মানুষ কীভাবে খাবার পাবেন। ধীরে ধীরে যদিও সবাই জেনে যায় আবার অনেক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

অথচ হাসান শরীফ যুদ্ধ করে যান। কর্মী কমে যাওয়ায় তিনি আরেকটি পথ অবলম্বন করেন, যার ফলে কর্মীর সংকট নিরসন হয়। কিন্তু তিনি পালাতে পারেননি। চোখের সামনে দেখেছেন করোনা রোগীদের হাহাকার, এক লিফটেই করোনায় মৃত ব্যক্তির সঙ্গে নেমেছেন। করোনা রোগীদের খাবারের ব্যবহারিত জিনিসগুলো পরিষ্কার করেছেন নিজ হাতে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিবেদিতপ্রাণ ডাক্তার-নার্সদের সঙ্গে হাসি–গল্পে মশগুল থেকেছেন…।

দিন শেষে ঘরে এসে এবার চলত নিজের সঙ্গে হাসানের যুদ্ধ। আগামীকাল যেতে পারবেন কি আবার যুদ্ধে। এদিকে যখন দেশ থেকে পরিবারের ফোন আসত, শুরু হতো মিথ্যা মিথ্যা খেলা। পরিবারের সবাই জানতেন তাঁদের সবচেয়ে ছোট ছেলেটি ঘরে হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাঁরা জানতেন না যে তাঁদের এই ছেলেটি মানবতা আর দেশপ্রেমকে ধারণ করে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করে দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা মৃত্যুর রাজপ্রাসাদকে জীবন দিতে যান।

কোনো এক উৎসবের দিন কাজের স্থানে। ছবি: সংগৃহীতসেই হাসপাতালে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও করোনায় চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। এর মধ্যে একজন মারাও যান। তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন প্রতিটি বাংলাদেশিদের খোঁজখবর নিতে। রোগীদের খবরাখবর তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে পৌঁছে দিতে।

বাংলাদেশের নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার আবুল হোসেন আখোনজীর ছোট ছেলে হাসান শরীফ। ৩৫ বছরের হাসান ২০০৬ সালে এই স্বপ্নের দেশ ইতালিতে আসেন। প্রথমে ভিসেন্সা এবং পরে মিলানোতে। শোনা যায় অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিদের তিনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

কোন বিশেষ কথা অথবা চাওয়া অথবা পাওয়ার কোনো ইচ্ছা পোষণ করেন কি না জানতে চাইলে বলেছেন, আপনারা যখন ঘরে ছিলেন আমি তখন এই রোগের ঘরে বাস করেছি। এই পরবাসের এই সময়ে দাঁড়িয়ে এটাই বুঝেছি যে মানুষের জন্য মানবতা ও ভালোবাসা কখনো স্থান, কাল বা পাত্রে ধারণ করে রাখা যায় না। আজ দেশের দিকে তাকালে দেখি করোনার কারণে মানবিকতা চলে গেছে। ইতালিয়ানদের দেখে এইটা বুঝেছি যে মানুষের জন্য মানবতা ও ভালোবাসাই বাঁচাতে পারে জীবন। অন্যকিছু দিয়ে না।