সাইফুল ইসলাম রিয়াদঃ দেহের প্রাণ খাদ্য, সেই খাদ্য যখন এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী নষ্ট মানুষের হাতে পড়ে বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। নির্ভেজাল ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়া যখন অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। চারিদিকে শুধু ভেজাল আর ভেজাল তখন ভেজালের বিরুদ্ধে একপ্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করে নোয়াখালী মানুষকে আশার আলো দেখায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসন।
মে মাসব্যাপী নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রোকনুজ্জামান খান এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ এর সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহার নেতৃত্বে জেলায় ৬৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৫২টি মামলায় ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এতে আশার আলো দেখে গত কয়েকদিন ধরে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের ফেইসবুক পেইজ এ ঈদের কেনাকাটায় ওজনে কারচুপি, ভেজাল পণ্য সরবরাহ ও গণ পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত অভিযোগ করেন অনেকেই। তারই পরিপেক্ষেতে শনিবার (১জুন) দিনব্যাপী নোয়াখালীর মাইজদিতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানে হয়। অভিযান পরিচালনা করেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রোকনুজ্জামান খান। আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয় নোয়াখালী শাখার সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা এবং বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় এর প্রতিনিধি মোঃ মামুনুর রহমান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন সুধারাম মডেল থানা, নোয়াখালী।
আদালত পরিচালনাকালে নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ডে হিমাচল কাউন্টারে মূল্য তালিকাবাড়তি মুনাফা লোভী আশায় তারা জেনেশুনেই এই গর্হিত কাজটি করে থাকেন। টাকা অর্থ দন্ড দেওয়া হয় এবং পাশের দুটি কাউন্টার খোলা থাকলেও দীর্ঘ সময়ে কাউন্টার মালিক কে খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ সময় রাস্তায় চলাচল করা হিমাচল, একুশে, লাল-সবুজ, বাধন, সুগন্ধা দ্রুতযানসহ বিভিন্ন যান বাহনের টিকেট যাচাই করা হয়। অপরদিকে সিএনজি-অটো রিকশা থামিয়ে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং এ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে চালিত সিএনজি ও অটো রিকশা মালিকদের বেশি ভাড়া দাবী করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সুপার মার্কেটের সামনে, হাসপাতাল রোড, টাউন হল মোড় সোনাপুর সিএসজি স্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে সিএনজি ও অটো রিকশা মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করা হয়। সোনাপুরে স্থাপিত সবগুলো বাস কাউন্টার পরিদর্শন করা হয়।
সোনাপুর কাঁচা বাজারে মাংস বিক্রয়ে ওজনে কারচুপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাহারের মাংস দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে মাংসে প্রায় ১০০ গ্রাম কম সরবরাহ করছেন এবং একই সাথে সেবাগ্রহণকারীদের নিম্নমানের ভেজাল সেবা প্রদান করছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ও স্বীকার করায় দোকানীকে ‘ওজন ও পরিমাপ আইন ২০১৮’ এর ২৯ বিধি লঙ্গনের দায়ে ৪৬ধারায় ১৫হাজার টাকা অর্থ দন্ড প্রদান করা হয় এবং একই সাথে ঐ দোকান থেকে ক্রয় করা নিম্নমানের পণ্যের টাকা টাকা গ্রাহকদের ফেরত প্রদান করিয়ে দেওয়া হয়। কাঁচা বাজারের প্রায় প্রতিটি ডিজিটাল বাটখারা পরীক্ষা করা হয়। সোনাপুর চৌরাস্তায় স্থাপিত সম্মুখের বিভিন্ন ফলের দোকানের ডিজিটাল বাটখারা পরীক্ষা করা হয়।
পৌরবাজারে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মাংস বিক্রয়ের সেবার মূল্য টানানো রয়েছে এবং সঠিক ওজনে মাংস বিক্রয় হচ্ছে। বাজারের ডিজিটাল বাটখারাগুলো পরীক্ষান্তে সঠিক পাওয়া যায় এবং ম্যানুয়েল বাটখারা না ব্যবহার করার জন্য দোকানীদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
অনুমোদনবিহীন কসমেটিকস বিক্রয়ের আভিযোগের প্রেক্ষিতে, সুপার মার্কেটের কসমেটিকসের দোকানগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় এঞ্জেল কসমেটিকস কে অনুমোদনবিহীন পণ্য রাখার অপরাধে ‘ওজন ও পরিমাপ আইন ২০১৮’ এর ২৪ বিধি লঙ্গনের দায়ে ৪১বিধিতে ১০হাজার টাকা জরিমানা দন্ড আরোপ করা হয়।
কাপড় পরিমাপে ‘গজ’ ফিতার ব্যবহার অনেক পুরনো হলেও ‘ওজন ও পরিমাপ আইন ২০১৮’ এর ২৮ বিধিতে মিটার ব্যতীত কাপড় পরিমাপ নিষেধ করা হয়েছে এবং এই বিধির লঙ্গনের দায়ে ৪৫ বিধিতে ম্যাচিং ফেয়ারকে ৫০০টাকা জরিমানা করা হয়। গজ ফিতায় কাপড় ক্রয় করলে প্রায় ৩.১৭৮ ইঞ্চি কাপড় কম প্রায় গ্রাহকগণ। এজন্য ভ্রাম্যমান আদালত চলাকালীন সময়ে সুপার মার্কেটের ৮টি কাপড়ের দোকান থেকে কাপড় মাপার গজ জব্দ করা হয়।
জনস্বার্থে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে ৫টি মামলার পরিচালনা করে ৫জন ব্যক্তিকে ৩৪৫০০ টাকা জরিমানা দন্ড আরোপ ও আদায় করা হয়।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রোকনুজ্জামান খান জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ যে কোন মাধ্যমে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কে অভিযোগ জানাতে পারেন এবং ঈদ ও সম্প্রীতিকে নির্বিঘ্ন ও আনন্দময় করতে জেলা প্রশাসনের জনস্বার্থে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।