নোয়াখালীর বার্তা ডটকমঃ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে(২০) ধর্ষণ করে ভিডিও চিত্র ধারনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ এই অভিযোগে তিনজন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।
ধর্ষণের ১১দিন পর মঙ্গলবার রাতে মামলা হলে বুধবার ভোরে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে গত ৯ অক্টোবর রাতে উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়ন এলাকায়। অভিযুক্ত ধর্ষক পারভেজের ভাই শিমুলের মাইক্রোবাস চালক ওই গৃহবধূর স্বামী। ঘটনার পরদিন রাতে তিনি বাড়িতে এসে ঘটনা জানার পর তার তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পরদিন সকালে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।
গ্রেপ্তাররা হলো, ছাতার পাইয়া গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের ছেলে শুভ(১৮), একই গ্রামের আবদুল হকের ছেলে রকি(১৭) ও হাছান (১৮)। তবে পুলিশ ছাতারপাইয়া গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে ধর্ষক পারভেজকে (২৫) এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার ছাতারপাইয়া পূর্ব পাড়া গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে শিমুলের মাইক্রোবাস ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন ওই গৃহবধূর স্বামী। গত ৯ অক্টোবর গৃহবধূর স্বামী মাইক্রোবাস নিয়ে ভাড়ায় যান চট্টগ্রামে। ওইদিন সন্ধ্যায় মাইক্রোবাসের মালিক শিমুলের ছোট ভাই অভিযুক্ত ধর্ষক পারভেজ তার ১০-১২জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে ওই অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে। এসময় গৃহবধূকে একা পেয়ে পারভেজ ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে।
পারভেজের সহযোগী কিশোর গ্যাং সদস্য শুভ, রকি, হাসানসহ অন্যরা জানালা দিয়ে ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও করে। পারভেজ ধর্ষণ করে চলে যাওয়ার পর শুভ, রকি ও হাসানসহ ৮-১০ জন আবার ওই গৃহবধূর ঘরে ঢুকে ধারণ করা ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে তাকে আবারও ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে রাজি না হলে ওই ধর্ষিতার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
গৃহবধূ তাদের সঙ্গে অনৈতিক কাজে রাজি হননি এবং চাঁদা দিতেও চাননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শুভ, হাসান ও রকি ধর্ষণের ভিডিও চিত্রটি ধর্ষিতা গৃহবধূর স্বামীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে পাঠিয়ে দেন। ওই দিন রাতে গৃহবধূর স্বামী বাড়ি ফিরে পরদিন সকালে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর বড় বোনের স্বামী জানান, ধর্ষণ ঘটনার ভিডিও চিত্র তার স্বামী দেখার পর ১০ অক্টোবর শনিবার সকালে তার বাড়ি থেকে স্ত্রীকে বের করে দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে ধর্ষিতার আত্মীয় স্বজন ও ধর্ষকের স্বজনদের মধ্যে মীমাংসার কথা বলে পুলিশকে অভিযোগ করতে বাধা দেন অভিযুক্ত পারভেজের পরিবারের লোকজন।
পরে মঙ্গলবার রাতে ওই নারী সেনবাগ থানায় গিয়ে পারভেজকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনের নামে মামলা করেন।
ছাতারপাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান জানান, মঙ্গলবার বিকালে ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ ও তার ভগ্নিপতি তার কাছে বিষয়টি জানালে তিনি তাদেরকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সেনবাগ থানার উপপরিদর্শক তারেকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ধর্ষক একজন। তার সহযোগী অন্যরা ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও চিত্র ধারণ করেছিল। এদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষক পারভেজসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল বাতেন মৃধা ধর্ষণের ঘটনায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলার প্রধান আসামি ধর্ষক পারভেজসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ধর্ষিতা ওই গৃহবধূর স্বামীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।