নোয়াখালীর বার্তাঃ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে হিজবুত তাওহীদ সদস্যরা আবারও সক্রীয় হয়ে উঠেছে। তাদের আনাগোনায় গ্রামবাসী আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, হিজবুত তাওহীদ নামক সংগঠনটি আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে কালো তালিকাভূক্ত। গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে সংগঠনটি। যেকোন সময় এ সংগঠনটি নিষিদ্ধ হতে পারে। জঙ্গিবাদী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে সংগঠনটির বিরুদ্ধে।
বিগত ২০০৯ সালে তাদের চলাফেরা সন্দেহজনক দেখে এলাকাবাসী বাধা দেয়। এ সংগঠনটির অন্যতম নেতা উপজেলার পোরকরা গ্রামের নুরুল হকের ছেলে মুদী দোকানদার হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে গ্রামবাসীর উপর অতর্কিতভাবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় হিজবুত তাওহীদের সদস্যরা প্রায় ২০০ গ্রামবাসীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। পরে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ১৪০জন হিজবুত তাওহীদের নারী-পুরুষ সদস্যকে আটক করে। তাদের বসতবাড়ীতে তল্লাশি চালিয়ে মুখোশ, ছোরা, গান পাউডার উদ্ধার করে।
বিগত ২০১৪ সালে ঐ গ্রামে মসজিদ থাকা অবস্থায়ও আবারও ঐ সংগঠনের সদস্যরা উপজেলার পোরকরা গ্রামের নুরুল হকের বাড়ীতে মসজিদের নামে ঘর নির্মাণ করেছিল। এখানে বহিরাগত লোকজনকে একত্রিত করে বিভিন্ন ধরণের কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এসময় গ্রামের মুসল্লীরা বাধা দিলে গ্রামবাসী ও হিজবুত তাওহীদের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে হিজবুত তাওহীদের ২ সদস্য ও ১ গ্রামবাসী নিহতসহ অন্তত ৫ শতাধিক লোকজন আহত হয়। পরে হিজবুত তাওহীদের সদস্যরা বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় ও কোর্টে প্রায় ৫ হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে হত্যা, মারধর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ প্রায় ৭টি মামলা দেয়। এ মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামের হাজার হাজার নিরীহ জনগণ এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় পোরকরা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী সরেজমিনে গেলে জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ গ্রামে হিজবুত তাওহীদের অন্যতম সদস্য হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে হিজবুত তাওহীদ সংগঠিত হয়। তারা বিভিন্ন লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ লোকজনকে তাদের সদস্য করে নিচ্ছে। তাদের প্রচার প্রচারণায় এলাকায় বিভিন্ন ধরণের লিফলেট, ব্যানার, পোষ্টার বিলি করছে। রাতের বেলায় তাদের বাড়ীতে গোপনীয় বৈঠক বসে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে। ইতিপূর্বে নুরুল হকের বাড়ীতে হিজবুত তাওহীদের সদস্যরা শহীদি জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করে। এ মসজিদের নাম নিয়ে এলাকায় বিতর্ক রয়েছে। মসজিদে তাদের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে নামাজ আদায় করতে দেয়া হয় না বলে গ্রামবাসী জানায়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, নোয়াখালীতে প্রকাশ্যে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার পর হিজবুত তাওহীদ সংগঠনটি সারা দেশের ন্যায় সোনাইমুড়ীতেও ব্যাপক তৎপরতা শুরু করছে। ব্যানার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, বই ডকুমেন্ডারীসহ তারা নানা প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। জঙ্গিবাদ বিষয়ে সক্রীয় হয়ে উঠা এ সংগঠনের বিরুদ্ধেই মৌলবাদী প্রচারসহ জঙ্গিবাদের অভিযোগ রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যে সব সন্দেহভাজন সংগঠন নিষিদ্ধ করণের পর্যালোচনার তালিকায় আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হিজবুত তাওহীদ।
বক্তব্য নিতে হিজবুত তাওহীদের বর্তমান এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ না করলেও হিজবুত তাওহীদের কেন্দ্রীয় হিজবুত তাওহীদের যুগ্ন দপ্তর সম্পাদক মোখলেছুর রহমান সুমন রিসিভ করে জানান, বিগত ২০১৪ সালে গ্রামবাসী ও হিজবুত তাওহীদের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হওয়ায় এ মসজিদের নাম দেয়া হয়েছে শহীদি জামে মসজিদ।
তবে এ সংগঠনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের গোয়েন্দা নজরদারীতে রয়েছে স্বীকার করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে তারা নন, সবাই গোয়েন্দার নজরদারীতে আছেন।
সোনাইমুড়ী থানার ওসি আব্দুস সামাদ হিজবুত তাওহীদের সদস্যদের বিষয়ে জানান, বিগত সময়ে কয়েকবার গ্রামবাসী ও হিজবুত তাওহীদের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বর্তমানে যদি তারা বিরোধ করার বিষয়ে কোন পরিকল্পনা করে তা খতিয়ে দেখা হবে। গ্রামবাসী আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। গোয়েন্দা নজরদারীতে হিজবুত তাওহীদ রয়েছে।
সূত্রঃ প্রিয় নোয়াখালী