সাইফুল ইসলাম রিয়াদঃ চলছে ধান কাটার মৌসুম। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নোয়াখালীর চাটখিলে আসতে শুরু করেছে ধান কাটার শ্রমিকরা।চলছে শ্রমিক ক্রয়ের জমজমাট বাজার।

স্থানীয়রা তাদের দিনমজুর বা কামলা বলে ডাকেন।
সরেজমিনে চাটখিল উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের আনিতাশ ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় বেশকিছু মানুষের ভিড়। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের সন্ধানে চাটখিলে এসেছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য দীর্ঘ পথ পার হয়ে কাজের সন্ধানে এসেছেন তারা। প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমজীবী মানুষের হাট বসে এখানে। তারা হাটে আসে বিক্রি হতে। ক্রেতারা আসলে চলতে থাকে দর কষাকষি। একবার বাড়ে, আরেকবার কমে।

৮০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী মানুষ তাদের এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় দলে দলে ছুটে আসেন চাটখিল বাজারের মানুষ বিক্রির হাটে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা ক্রেতারা কাজের জন্য শ্রমজীবীদের এখান থেকে কিনে নিয়ে যায়। শীতকালীন সবজি চাষ ও ইরি-বোরো মৌসুম শুরু হলেই এখানে শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড় জমে ওঠে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এবং নোয়াখালীর দ্বীপ অঞ্চল হাতিয়া সহ বিভিন্ন এলাকার অভাবী মানুষ শ্রম বিক্রি করতে এ হাটে জড়ো হন। ভিড় করছেন কাজের সন্ধানে আসা মৌসুমী শ্রমিকরা।
জমি চাষ, ধান রোপণসহ নানা কাজে শ্রমিকদের দরদাম করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করতে শর্তসাপেক্ষে কিনে নেন জমির মালিক ক্রেতা-গৃহস্থরা।

সাধারণত ধানকাটা ও ধানের চারা রোপনের মৌসুমে এসব শ্রমজীবীদের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময়ে মজুরীও বাড়ে সমান তালে। ভরা মৌসুমে প্রতিজন কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মজুরি নির্ধারিত হয় ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমের কাজ কমে আসলে মজুরি নেমে আসে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। সাথে থাকে দুবেলা খাবার ও থাকার জায়গার ব্যবস্থা। ধানকাটা, ইরি-বোরো রোপা মৌসুমের সময় বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। ২,৪, ৮ ও ১০ জনের দলে ভাগ হয়ে দল বেঁধে জড়ো হন শ্রমিকরা। দরকষাকষি হয় সবকিছু ঠিকঠাক হলে ক্রেতার সঙ্গে তারা চলে যান। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বাড়লে শ্রমের দাম বেড়ে যায়।

কথা হয় কাজের সন্ধানে আসা হাতিয়ায় আবদুর রহমান , রংপুরের মোহাম্মদ মিজান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শুক্কুর আলী সহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা এসেছেন পেটের দায়ে নিজেদের শ্রম বিক্রিতে। শ্রমিকরা জানান, মহামারী করোনা কালীন সময়ে নিজেদের এলাকায় কাজকর্ম নেই, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে। ক্ষুধার তাড়নায় প্রিয় গ্রাম, পরিবার-পরিজন ছেড়ে অন্য জায়গায় কাজ খুঁজতে হয়। অন্যদিকে তাদের নিজের এলাকার চেয়ে এই অঞ্চলে শ্রমের মূল্য বেশি পাওয়ায় ধানের মৌসুমে কাজ করতে চলে আসেন তারা। কাজের সময় গৃহস্থ বাড়িতে তিনবেলা খাবার জোটে। প্রতিদিন ৭০০/৮০০ টাকা করে পারিশ্রমিক জোটে। ধান কাটার মৌসুম শেষে বাড়ি ফেরেন। প্রতি মৌসুমে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারেন।

পরকোট থেকে আসা ক্রেতা মাহাবুর আলম জানান, এলাকায় কাজের লোক পাওয়া যায় না। প্রতি মৌসুমে সে চাহিদা মতো শ্রমিক নিয়ে কাজ করান। এবার ধান তোলার সময় রমজান মাস হওয়ায় এলাকার স্থানীয়রা দৈনিক হাজিরা হিসেবে বেশি টাকা চাচ্ছে তাই তিনি চাটখিল বাজারে এসেছে এখান থেকে ৮ জন কামলা (শ্রমিক) নিতে হাজিরা হিসেবে তিনি ৭০০ টাকা করে দিতে চাচ্ছে সাথে তিন বেলা খাবার।

চাটখিল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন নোয়াখালী জেলাটি প্রবাসী অধ্যুষিত জেলা, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চাটখিল উপজেলা। এই উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন দেশে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই উপজেলায় খাদ্যশস্য উৎপাদনের মূল জমির ৭৫ শতাংশ মাঝারি ও নিচু জমি তাই এখানে ধান ছাড়া অন্য খাদ্যশস্যের বীজ বপন করা ও খাদ্যশস্য উৎপাদন করা খুবই কষ্টকর একটি বিষয়। আর এই অঞ্চলটি প্রবাসী অধ্যুষিত তাই এই অঞ্চলের কৃষকদের অন্য জেলার শ্রমিকদের উপর নির্ভর করতে হয় যে কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।