সাইফুল ইসলাম রিয়াদঃ দীর্ঘ ২০ বছর থেকে ময়লা আবর্জনা জমে কচু বাগানে রূপান্তরিত হয়েছিলো নোয়াখালীর চাটখিল পৌর বাজারের একমাত্র সরকারি দীঘিটি। দেখে বুঝার উপায় ছিলোনা জলাশয় না কচু বাগান।
দীঘিটিতে বেশ কয়েকবার প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল, এটি ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের ও পাঁয়তারা করে প্রভাবশালী কিছু ভূমিদস্যুরা। স্থানীয়দের তোপের মুখে তা ভেস্তে যায়।
গত ২০ বছরে ১৫ বার এর অধিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছিলো চাটখিল বাজারে কিন্তু ফায়ার সার্ভিস দীঘিটি থেকে পানি উত্তোলন করতে না পারায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা।
দিঘীটিকে পুনরুদ্ধারের জন্য জনমত গড়ে তোলে স্থানীয়রা, আলোচনার ঝড় উঠে সোশ্যাল মিডিয়াতে তখনই নজর পড়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম এমপি ও চাটখিল উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবিরের। গত ২২ জুন স্থানীয়দের নিয়ে দীঘিটি পরিদর্শন করেন সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম। সাথে ছিলেন চাটখিল পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন (ভিপি), উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ মোসা, চাটখিল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এইচ এম আলী তাহেরী ইভু, চাটখিল উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বাবর প্রমুখ।
সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবির সাথে সাথেই পৌরসভাকে নির্দেশ দেন দ্রুত সময়ের মধ্যে দীঘিটি পরিষ্কার করে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবহারের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায় ২ জুলাই থেকে শুরু হয় ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ। চলতে থাকে দিনরাত দীঘিটি পরিষ্কারের কাজ। এতে হাসি ফুটেছে বাজারের ব্যবসায়ী সহ স্থানীয়দের মুখে।
দিঘির দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত আবাসিক এলাকা ভু্ঁইঞা কলোনির বাড়ির মালিক মেহেদি হাসান রুবেল ভূঁইয়া জানান আবর্জনার স্তুপে পরিণত হওয়ার পূর্বে চাটখিল বাজারের এই দীঘির পানি অত্যন্ত স্বচ্ছ ছিল আশপাশের লোকজন পুকুরটিতে গোসল এবং নামাজের অজু করত পরবর্তীতে সংস্কারের অভাবে এটি ময়লা আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়, চাটখিল বাজারে আগুন লাগলে ও এই দিঘী থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কোন ভাবে পানি উঠাতে পারেনি। দিঘীর ময়লা-আবর্জনা পলিথিন পোড়া বিষাক্ত ধোঁয়ার গন্ধে আশেপাশের মানুষের জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে দিঘিটি পরিষ্কার করা হচ্ছে আমরা আশাকরি দীঘিটি পরিষ্কার হলে এটি চাটখিলের একটি চিত্তবিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হবে এবং স্বচ্ছ পানিতে যদি মাছ চাষ করা হয় তাহলে একদিকে মানুষ লাভবান হবে এবং অপরদিকে বাজারে আগুন লাগলে দিঘী থেকে পানি নিয়ে বাজারে আগুন নেভানো যাবে এবং মসজিদসহ আশেপাশের মানুষ এই দীঘির পানি ব্যবহার করে উপকৃত হবে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সাবেক অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া বলেন আমার শৈশব কৈশোর কেটেছে চাটখিল বাজারেই, দীঘির পূর্ব পাড়ের কোয়াটারে, তাই আমার দীঘিটি নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে এখানে স্বচ্ছ পানি ছিল, জাতীয় দিবসে সাঁতার প্রতিযোগিতা হতো, আমরা বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম। কিন্তু একটা সময়ে এসে সব হারিয়ে গেছে। একটি স্বচ্ছ জলধারা ডোবায় পরিণত হয়ে স্থবির হয়ে গেছে। এমপি মহোদয়, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই জলধারাটি পুনরুদ্ধারের যে উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে এতে করে আমাদের আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন প্রধান কাজ হবে দীঘির পাড়ের দখল হয়ে যাওয়া (Encroached) জায়গা উদ্ধার করা । এরপর একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়া, প্রতিযোগিতামূলক আর্কিটেকচারাল ডিজাইন এর টেন্ডার আহ্বান করে নকশা ( ডিজাইন) নির্বাচন করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের ব্যবস্হা করে চাটখিল বাসীদের সপ্নপূরণে এগিয়ে যাওয়া।
চাটখিল পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন ভিপি বলেন এই দীঘিটিতে দীর্ঘদিন থেকে ময়লা আবর্জনা পড়ে থেকে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তাই আমরা সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিয়েছি দীঘিটি পরিষ্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করার। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই দীঘিটির চারপাশে গাইডওয়াল দিয়ে চাটখিলের একমাত্র স্বচ্ছ পানির জলাশয় ও দীঘির পাড়ে দৃষ্টিনন্দন পার্ক হিসেবে গড়ে তুলবো।
চাটখিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবির বলেন দিঘিটি হলো চাটখিল উপজেলা পরিষদের। দীঘিটি পুনরুদ্ধার করে একটি স্বচ্ছ জল ধারা এবং তার পাড়ে দৃষ্টিনন্দন একটিভ পার্ক তৈরি করা আমার অনেক দিন স্বপ্ন ছিল। আমি গত ৭ বছর থেকে দিঘিটি কে জনগণের ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য বারবার রেজুলেশন করেও কাজটি শুরু করতে পারিনি এখন আমাদের এমপি সাহেব ও পৌর মেয়র সাহেব কে সংযুক্ত করে পৌরসভা কে দায়িত্ব দিয়েছি দীর্ঘদিনের পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য। এরপরে আমাদের উপজেলা পরিষদের খরচে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে তৈরি করব। এবং এখানে পানির এমন ব্যবস্থা থাকবে যাতে করে বাজারে আগুন লাগলে সাথে সাথে আগুন নেভানো যায়। যেমনটি করে থাকে আমাদের দেশের গার্মেন্টগুলোতে।
নোয়াখালী -১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম এমপি বলেন আমি আমাদের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর কবির ও পৌরসভা মেয়র নিজাম উদ্দিন ভিপি কে নিয়ে একটি সুন্দর পরিকল্পনা করেছি। এবং হারিয়ে যাওয়া এই স্বচ্ছ জলাধারার দীঘিটিকে পুনরুদ্ধার করতে আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। খুব শীঘ্রই দীঘির পাড়ে আমরা ফুলের বাগান, ওয়াকওয়ে, সাধারণ মানুষ বিকেলবেলা সুন্দর সময় উপভোগ করার জন্য বেঞ্চ বসিয়ে চাটখিল উপজেলার একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে গড়ে তুলবো।