

সাইফুল ইসলাম রিয়াদ: নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার কাওমি অঙ্গনের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ জামেয়া ওসমানিয়া মাদ্রাসার কার্যকরী কমিটি ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে মাদ্রাসা কমিটি ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
৮ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল ১১ ঘটিকায় মাদ্রাসার শিক্ষক হল রুমে মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও মুফতি হারুনুর রশীদ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি লিখিত বক্তব্য বলেন, চাটখিল উপজেলার দশানী টবগা গ্রামে ২০০৫ ইং সালে মুফতী আব্দুর রহমান এর পৃষ্ঠপোষকতায় ও জামেয়ার কার্যকরী কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ডাঃ এম এ নোমান, মরহুম মাস্টার মুমিনুল হক চৌধুরী, ইউছুফ সাহেব, মাও: নূরুল আমিন সাহেব, শাহজাহান খান বাবুল, মোমিনুল ইসলাম দুলাল, মনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান, মাও: শেহাব উদ্দিন, হারুনুর রশিদ পাল ও কার্যকরী কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ এবং জামেয়ার প্রথম মুহতামিম মাওলানা ছানাউল্লাহ আব্বাসী জামেয়ার বর্তমান মুহতামিম মাও: ইউছুফ সাহেব, বর্তমান শাইখুল হাদীস মুফতী মুহাঃ আছেম সাহেব, শিক্ষকমণ্ডলী ও এলাকাবাসীর সমন্বয়ে জামেয়া ওসমানিয়া মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
জামেয়া ওসমানিয়া চাটখিলের সকলের প্রাণ প্রিয় দ্বীনিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি সম্মানিত কার্যকরি কমিটি, দাতাসদস্যগণ ও এলাকাবাসীর সুপরামর্শ এবং শিক্ষকমণ্ডলীর অক্লান্ত পরিশ্রমে দ্বীনের বহুমুখী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে। জামেয়ার শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কাঠামোগত উন্নয়নের ধারা অক্ষুন্ন রাখতে সকলের সর্বাত্মক সহযোগীতা আবশ্যক বলে আমরা মনে করি আমরা।
অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় বিগত ১৪ জুন ২০২৫ ইং বিকাল ৫.০০ ঘটিকায় জামেয়া ওসমানিয়ার কার্যকরি কমিটির ৩৩ তম সভা চলাকালে কিছু সংখ্যক লোক জামেয়ার বাহিরে ও ভিতরে অশুভ আচরণ দেখিয়ে সদস্যগণের মুখোমুখি হন। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামেয়ার কার্যকরি কমিটির বিরুদ্ধে স্মারকলিপি নামে একটি আবেদন সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেন, যা আমরা অবগত হই। উক্ত অনাকাংখীত ঘটনায় আমরা শিক্ষকমণ্ডলী দুঃখিত ও মর্মাহত।
জামেয়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে সংবিধান / গঠনতন্ত্র প্রণয়ন আবশ্যক বিধায় বিগত প্রথম মজলিশে শুরার বৈঠকে একটি খসড়া সংবিধান / গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত ০২/১০/২০১৬ইং জামেয়ার মজলিশে শুরার দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় প্রণয়নকারী সদস্যগণ জামেয়ার খসড়া সংবিধানটি উপস্থাপন করেন। সভায় পেশকৃত খসড়া সংবিধানটি উপস্থিত সদস্যগণ পর্যালোচনা করেন এবং সংবিধানটি পুনঃযাচাই করে অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সুতরাং সংবিধানের বরাত দিয়ে কার্যকরি কমিটির বিরোধিতা করে যারা স্মারকলিপি প্রদান করেছেন, তারা জামেয়ার সাথে অন্যায় করছেন বলে আমরা মনে করি।
জামেয়া ওসমানিয়ার বর্তমান শাইখুল হাদীস মুফতী মুহা: আছেম যিনি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামেয়ার সম্মানীত উস্তাদ। তিনি জামেয়া ওসমানিয়া প্রতিষ্ঠার অন্যতম সদস্য। তিনি জামেয়াকে অরাজনৈতিক দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তিনি কখনো মাদরাসায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন নাই। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক তকমা দিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যাচার মিডিয়াতে প্রচার হয়েছে। যাহা সম্পূর্ণ অসত্য, সাজানো। আমরা শিক্ষকমণ্ডলী উক্ত বিষয়টি অবগত আছি।
জামেয়া ওসমানিয়ার কার্যকরি কমিটির মুখোমুখি হওয়া ব্যক্তিগণ যে স্মারকলিপি প্রশাসনকে দিয়েছেন, সেখানে জামেয়ার শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ছাত্র শিক্ষকগণের জান- মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির অগ্রীম সম্ভাবনার বার্তা জানিয়েছেন। উক্ত বার্তা দিয়ে জামেয়া তথা দ্বীনের সাথে প্রতারণার নমুনা দেখিয়েছেন। ১৪৪ ধারা জারি, মাদরাসা বন্ধ ইত্যাদি প্রতারনামূলক তথ্য দেওয়া কোন দ্বীনি মুসলমানের কাজ হতে পারে না। তারা জামেয়ার আভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও অনাধিকার চর্চার মত অপরাধ করছে বলে আমরা শিক্ষকমণ্ডলী মনে করি। তাদের এমন আচরণের জন্য আমরা নিন্দা জ্ঞাপন করছি।
এমতাবস্থায় জামেয়ার শিক্ষকমণ্ডলী সাম্প্রতিক প্রকাশিত অসত্য অপবাদ ও স্মারকলিপি প্রত্যাহার করত দুঃখ প্রকাশ ও ভুল স্বীকারের জোর দাবী জানাচ্ছি। নচেৎ ভবিষ্যতে জামেয়ার পরিবেশ অবনতি হলে আবেদনকারীদের উপর তার দায়-দায়িত্ব বর্তাবে।
লিখিত বক্তব্য শেষে মাদরাসার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা ইউসুফ ও শাইখুল হাদীস মুফতি আসেম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন৷ উক্ত বক্তব্যে তারা জানান, জামেয়ার বর্তমান পরিস্থিতি খুবই শান্ত ও সন্তোষজনক। শিক্ষকবৃন্দ ছাত্রদের পড়ালেখার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে, এবং মাদরাসার শিক্ষা – দীক্ষা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মহান রাব্বুল আলামীনের সাহায্য ও দল মত নির্বিশেষে মাদরাসার সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা কামনা করেন।