নোয়াখালীর বার্তাঃ জোটবদ্ধ ভোটের রাজনীতি পাল্টে দিয়েছে ফেনী-৩ আসনের সব হিসাব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখানে প্রার্থী দেয়নি। ফলে দুই জোটেরই শরিক দলের প্রার্থীরা সক্রিয় হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে এখানে দুই জোটেই চলছে অস্থিরতা।
এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন আলোচিত সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তবে তাকে মেনে নিতে পারছে না আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতোমধ্যে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
অন্যদিকে, বিএনপির প্রার্থী দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু শেষ মুহূর্তে মনোনয়নপত্র দাখিল করা থেকে বিরত থাকেন। সেখানে এগিয়ে এসেছেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক জেএসডির কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
জেলার সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজী আর দাগনভূঞা উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-৩ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৯২ হাজার ৯৫৬ জন। ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সোনাগাজী এবং ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে দাগনভূঞা উপজেলা গঠিত।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১০টি নির্বাচনের দুটিতে আওয়ামী লীগ, দুটিতে জাতীয় পার্টি, এরপর টানা ৫টিতে বিএনপির প্রার্থী জয় পান। তবে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।
বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি রহিম উল্যাহ বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। পরে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার হয়েই কাজ করেন। ফলে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির রিন্টু আনোয়ারকে সহজেই পরাজিত করেন হাজি রহিম উল্যাহ।
এবারও নৌকার মনোনয়ন চেয়ে দেড় ডজন নেতা আবেদন করেন। শেষ পর্যন্ত কাউকেই প্রার্থী দেয়া হয়নি। ফলে জাতীয় পার্টিতে সদ্য যোগ দেয়া আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীই এখানে মহাজোটের প্রার্থী, এটা অনেকটাই নিশ্চিত।
তবে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল বাশার ও সংসদ সদস্য হাজি রহিম উল্যাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আবুল বাশার তার ছেলে ব্যবসায়ী ইসতিয়াক আহমেদ সৈকতকেও প্রার্থী করেছেন।
জানা গেছে, দলীয় পদ রক্ষায় হাইকমান্ডের নির্দেশে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়াবেন। তবে ছেলে সৈকতকে নিয়েই তার সমর্থকরা মাঠে থাকবেন।
অন্যদিকে, মাসুদ চৌধুরীকে জাপার টিকিট দেয়ায় দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন গতবারের মহাজোট প্রার্থী রিন্টু আনোয়ার। তিনি পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের উপদেষ্টা ছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ছিলেন।
যুবলীগ নেতা আবুল বাশার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের অনুরোধে আমি প্রার্থী হয়েছি। দীর্ঘদিন কাজ করায় তাদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক। এখানকার ভোটাররা কোনো মৌসুমী পাখিকে মেনে নেবে না।’
রিন্টু আনোয়ারের মুখেও একই সুর, ‘আমরা তৃণমূলের পালস বুঝি। কারণ, তাদের সঙ্গেই দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি। রাতারাতি কেউ নেতা হয়ে গেলেন, আর ভোটে দাঁড়িয়ে যাবেন, জনগণ তা মেনে নেবে না।’
লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করছেন। সেখানে তিনি বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তিনি কাজ করছেন।’
মান-অভিমান ভুলে নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি।
অন্যদিকে, দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে ঘিরে দুই উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে তিনি মনোনয়নপত্র জমা না দেয়ায় নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
মিন্টুর ছোট ভাই দাগনভূঞা উপজেলা সভাপতি আকবর হোসেন ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। তবে এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এ দু’জন যে হেভিওয়েট মাসুদ চৌধুরীর মোকাবেলায় মিন্টুর বিকল্প নন, তা তারাও স্বীকার করছেন। তবে এখানে বিএনপির বিপুল ভোট ব্যাংক নিয়ে আশাবাদী আব্দুল লতিফ জনি ও আকবর হোসেন।
নির্বাচনী মাঠে নতুন হলেও জনি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। আর আকবর হোসেন দাগনভূঞা পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র। তাছাড়া তিনি ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী ছিলেন।
আব্দুল লতিফ জনি জানান, চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলে বিএনপির ঘাঁটি পুনরুদ্ধারে তিনি দৃঢ় আশাবাদী।
তার মতে, এ দুটি উপজেলা একদিকে যেমন সন্ত্রাসকবলিত, তেমনি উন্নয়ন বঞ্ছিত। দীর্ঘ এক দশক ধরে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে এখানকার জনগণ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। অনুকূল পরিবেশ পেলে ব্যালটের মাধ্যমে তারা উপযুক্ত জবাব দেবেন।
বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টু সরে যাওয়ায় এ আসনে তৎপর হয়ে উঠেছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির যুগ্ম-সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। তার পৈত্রিক বাড়ি দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে। ফেনী-৩ এর পাশাপাশি তিনি ঢাকা-১৮ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন জানান, জেএসডির পক্ষ থেকে আগেই এ আসনটি দাবি করা হয়েছিল। আব্দুল আউয়াল মিন্টু প্রার্থী না হওয়ায় তিনি প্রার্থী হয়ে ঐক্যফ্রন্টকে আসনটি উপহার দিতে চান।