নোয়াখালীর বার্তা ডটকমঃ নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে ১৬ সেন্টিমিটার লম্বা লেজ (শরীরের পশ্চাৎদেশ থেকে বেড়িয়ে আসা অতিরিক্ত অংশ) নিয়ে একটি কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। পৃথিবীতে বিরল ও দেশে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটায় তা প্রকাশ হওয়ার পর এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
মাত্র ১৬ দিন বয়সী শিশুটির নাম মাইমুনা। জন্ম থেকেই লেজ থাকায় প্রথমে বিষয়টি গোপনে রেখে স্থানীয় একাধিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন শিশু মাইমুনার পরিবার। কিন্তু এমন অস্বাভাবিক শারীরিক সমস্যার সমাধান কোনো চিকিৎসকই দিতে পারেননি।
শিশুটির বাবা সৌদি প্রবাসী ইমদাদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, জন্মের পরপর ওর শরীরে লেজ দেখে আমরা প্রথমে কিছুটা বিস্মিত হয়ে যাই। যেটি ছিল সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার পাশাপাশি মাইমুনার জন্য যন্ত্রণাদায়কও। যার ফলে আমরা জন্মের পরপরই বিভিন্ন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। কিন্তু সবাই ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় এসে ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তাররা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিলে মঙ্গলবার মাইমুনার অপারেশন হয়। এখন আলহামদুলিল্লাহ্ সে ভালো আছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় লেজটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সফল অপসারণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের কনসাল্টেন্ট ডা: মো. নজরুল ইসলাম আকাশ।
তিনি জানান, সোমবার (১০ জুন) যাত্রাবাড়ির ধলপুরে অবস্থিত আল কারিম জেনারেল হাসপাতালের একজন পরিচালক তাকে ফোন করে মাইমুনার বিষয়ে জানান এবং জিজ্ঞাসা করেন, এই অস্বাভাবিকতার কোনো চিকিৎসা সম্ভব কি না? তখন তিনি রোগীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্তের কথা জানানবেন বলে আশ্বাস দেন।
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এই ধরণের রোগী (মানুষের লেজ) কখনো দেখা যায়নি তাই বিষয়টা জটিল ছিল। মেডিকেলের ভাষায় এই রোগকে স্কিন এপেন্ডেজেস স্পাইনা বাইফিডা অকাল্টা বলে। এর অস্বাভাবিকতার মাত্রা সল্প থেকে জটিল পর্যন্ত হতে পারে। যেমন এমন রোগীর কারো কারো জন্ম থেকে মেরুদণ্ডের ট্রেডাথ স্পাইনাল কর্ড থেকে পশ্চাৎদেশের উপরে চামড়ার বাইরে থেকে এক ধরণের ডিস কলারেশন থাকে। অনেকের আবার গর্ত দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রে চুল থাকে। আবার মাইমুনার মতো এরকম লেজও হয়। এই লেজে আবার হাড় থাকারও খবর পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা যায়, মাইমুনার শুধুমাত্র চামড়া থেকে এই অস্বাভাবিক অংশটি ছিলো। এর সঙ্গে কোনো প্রকার হাড় ছিলো না। এমনকি মেরুদণ্ডের সঙ্গে এর কোনো সংযোগও ছিলো না। লেজটি শুধুমাত্র চামড়া ও নরম টিস্যু দিয়ে গঠিত ছিল। তাই সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই মাইমুনার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তিনি ছাড়াও তার দলে একজন দক্ষ অ্যানেসথিসিয়ালোজিস্টের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন মেডিকেল অফিসার ছিলেন।
সফল অপারেশনের পর তিনি জানান, সাধারণত এর থেকে আরো অনেক জটিল অপারেশন করেছেন তিনি। এমনকি সদ্যোজাত শিশুরও যৌনাঙ্গের অপারেশন তিনি করেছেন। সেই তুলনায় অপারেশনের দিক থেকে এটি তেমন জটিল ছিল না তবে রোগটা অস্বাভাবিক ও অকল্পনিয় ছিল। অপারেশনের পর মাইমুনা এখন ভালো আছে। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে মাত্র ৪০-৫০ জন মানুষ লেজ (শরীরের পশ্চাৎদেশ থেকে বেড়িয়ে আসা অতিরিক্ত অংশ) নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। তথ্যমতে, বাংলাদেশে এটিই প্রথম।